Summary
খাদ্য দেহের পুষ্টি সাধন করে এবং সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য। খাদ্যের মাধ্যমে দেহ শক্তি পায় এবং কার্যক্ষম থাকে। সুষম খাদ্য ছয়টি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ: আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থ, অজৈব লবণ, ভিটামিন ও পানি। বয়স, শারীরিক কর্মের সাথে খাদ্যের চাহিদা পরিবর্তিত হয়, যেমন শৈশবে বেশি আমিষ, এবং খেলোয়াড়দের খাবার অন্যদের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।
খাদ্য থেকে উৎপাদিত শক্তি ক্যালরিতে পরিমাপ করা হয়। দৈনিক কাজের ধরন অনুযায়ী শক্তি ব্যবহারের তালিকা রয়েছে, যেখানে প্রকাশ করা হয়েছে কি পরিমাণ ক্যালরি প্রয়োজন।
বয়স অনুযায়ী খাদ্যের দৈনিক চাহিদার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, যেমন কিশোর-কিশোরী (১৩-১৫ বছর) এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পুষ্টির চাহিদা ভিন্ন। এছাড়াও বাড়ন্ত ছেলে-মেয়েদের খাদ্য পরিমাণের একটি তালিকা রয়েছে।
মূল কাজ: শারীরিক পরিশ্রমের উপর ক্যালরি খরচের তালিকা প্রস্তুত করা এবং বাড়ন্ত ছেলে-মেয়েদের দৈনিক খাদ্য চাহিদার একটি টেবিল তৈরি করা।
খাদ্য দেহের পুষ্টি সাধন করে। সুন্দর স্বাস্থ্য, সতেজ মন, কাজে উৎসাহ ও পরিশ্রম করার প্রবণতা সুপুষ্টির লক্ষণ। পরিশ্রম করার জন্য শক্তির দরকার। যে কোনো হাতিয়ার যেমন- দা, কুড়াল, ছুরি দিয়ে কাজ করলে এক সময় সেগুলো ভোঁতা হয়ে যায়, কাঠ ব্যবহারের ফলে ক্ষয় হয়, জুতা পুরনো হলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কিন্তু হাতের আঙ্গুল দিয়ে অনবরত কাজ করা হলে কিংবা পা দিয়ে হাঁটা বা অন্য কাজ করা হলে তা ক্ষয় হয়ে যায় না। কারণ খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ করে, পরিশ্রম করার শক্তি দেয়। মোট কথা খাদ্য দেহযন্ত্রকে সচল ও কর্মক্ষম রাখে। খাদ্যের ছয়টি পুষ্টি উপাদান দেহে এসব কাজ করে দেহের পুষ্টি সাধন করে। ছয়টি খাদ্য উপাদান যথা আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থ, অজৈব লবণ, ভিটামিন ও পানি যথাযথ অনুপাতে যে খাদ্যে পাওয়া যায় তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্যের এসব উপাদানের কাজ বিভিন্ন প্রকারের। বয়স, দেহের ওজন এবং পরিশ্রমের তারতম্য অনুসারে স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি বিভিন্ন ব্যক্তির খাদ্য চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন শৈশবে সর্বাধিক আমিষের দরকার। শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় এমন ব্যক্তির তাপ উৎপাদনকারী খাদ্যের প্রয়োজন। সন্তানসম্ভবা এবং প্রসূতি মায়ের খাদ্যপুষ্টির চাহিদা সাধারণ স্ত্রীলোকের চেয়ে বেশি। আবার রোগ ভোগের পর পুষ্টির চাহিদা স্বাভাবিক অবস্থা অপেক্ষা বেশি থাকে। একজন খেলোয়াড় খেলাধুলা করার জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করে বলে তার খাদ্য চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে।
শক্তিও ক্যালরির পরিমাণ : আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিপাক হওয়ার পর দেহে তাপ উৎপন্ন করে। খাদ্য হতে উৎপন্ন তাপ মেপে খাদ্যের ক্যালরির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। খাদ্যের ক্যালরি মূল্য কিলোক্যালরিতে প্রকাশ করা হয়। যেমন- ২৫০ গ্রাম দুধ থেকে ১৬৫ কিলোক্যালরি এবং এক চা চামচ চিনি থেকে ১৬ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন হয়। খাদ্যে নিহিত তাপ দেহযন্ত্রকে সচল রাখে, শরীরে কাজ করতে শক্তি যোগায়। খেলাধুলা করার জন্য, দৌড়ানো, রিকশা বা ঠেলাগাড়ি চালানো, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ প্রভৃতিতে বেশি শক্তি ব্যয় হয়। শরীরের ওজন বেশি হলেও কাজে বেশি শক্তি ব্যয় হয়। দেহের প্রয়োজনীয় শক্তিকে তাপের আকারে এবং কিলোক্যালরির হিসাবে উল্লেখ করা যায়। হালকা, মাঝারি ও ভারী কাজ করার জন্য কতটুকু কিলোক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয় তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এই তালিকার মধ্যে দৌড়ানো ও খেলাধুলার জন্য শক্তির উল্লেখ রয়েছে।
প্রতি কিলোগ্রাম দেহের ওজনের জন্য প্রতি ঘণ্টায় শক্তি ব্যয়ের পরিমাণ-
| কাজের ধরন | শক্তি (কিলোক্যালরি) |
| গোসল, পোশাক পরা, খাওয়া ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজ | ৩-৪ |
|
বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা পায়ে হাঁটা |
১.৫-১.৯ ৩-৫ |
| মাদ্রাসা-কলেজে পড়াশুনা, লেখা, সেলাই, টাইপ করা, রান্নাবান্না ইত্যাদি | ১.৫-২ |
| জুতার কারিগর এর মতো মাঝারি শ্রম | ২.৫-৪.৫ |
| কাঠ চেরাই, পাথর ভাঙ্গা, বোঝা বহন করা প্রভৃতি ভারী শ্রমের কাজ | ৫-১০ |
| দৌড়ানো ও খেলাধুলা করা | ৪-৮ |
কিলোক্যালরি শক্তি পরিমাপের পদ্ধতি : কোনো কাজ করার জন্য কার কতটুকু শক্তির দরকার তা উপরের তালিকা থেকে নির্ণয় করা যাবে। উদাহরণ স্বরূপ- ৫৫ কেজি ওজনের একজন খেলোয়াড়ের দুই ঘণ্টা খেলার কাজে শক্তি খরচ হবে- ৫৫ কেজি × ২ ঘণ্টা × ৪ কিলোক্যালরি = ৪৪০ কিলোক্যালরি। সুতরাং কাজ করার জন্য কী পরিমাণ শক্তির দরকার তা নির্ভর করে দেহের ওজন ও কাজের ধরনের উপর। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি দেহে মেদ বৃদ্ধি করে। একজন পুরুষ ও একজন মহিলার দৈনিক ক্যালরির চাহিদার ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের প্রতি পাউন্ড ওজন ২১ দিয়ে এবং মহিলার প্রতি পাউন্ড ওজন ১৮ দিয়ে গুণ করে যে গুণফল পাওয়া যাবে তাই হবে তাদের ক্যালরির দৈনিক চাহিদা। তবে মনে রাখতে হবে যে দৈনিক যে পরিমাণ ক্যালরির প্রয়োজন তা তিন বেলার আহার থেকে গ্রহণ করা উচিত।
বয়স অনুসারে খাদ্য উপাদানের দৈনন্দিন চাহিদা
| বয়স | শক্তি (কি ক্যালরি) | প্রোটিন (গ্রাম) | ক্যালসিয়াম ( মি: গ্রাম:) | আয়রন ( মি: গ্রাম:) |
ভিটা – এ (মাইক্রোগ্রাম) | ভিটা:বি-১ (মি: গ্রাম: | ভিটা:বি-২ (মি: গ্রাম: | ভিটা:সি (মি: গ্রাম:) |
| কিশোর-কিশোরী (১৩-১৫ বছর) |
২৫০০ ২২০০ |
৫৫ ৫০ |
৬৫০ ৬৫০ |
১৮ ২৪ |
৭২৫ ৭২৫ |
১.৩ ১.৩ |
১.৪ ১.৪ |
৩০ ৩০ |
| ছেলে-মেয়ে (১৬-১৮ বছর) |
৩০০০ ২২০০ |
৬০ ৫০ |
৫৫০ ৫৫০ |
৯ ২৪ |
৭৫০ ৭৫০ |
১.৫ ১.১ |
১.৭ ১.২ |
৩০ ৩০ |
| প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ | ২৪০০ | ৫৫ | ৪৫০ | ৯ | ৭৫০ | ১.২৫ | ১.৩ | ৩০ |
| প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীলোক | ১৯০০ | ৫০ | ৪৫০ | ২৮ | ৭৫০ | ১.০ | ১.০ | ৩০ |
বাড়ন্ত ছেলে-মেয়েদের দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ
খাদ্যের মৌলিক শ্রেণি |
ছেলে |
মেয়ে | |
| ১৩-১৫ বছর গ্রাম |
১৬-১৮ বছর গ্রাম |
১৩-১৮ বছর গ্রাম |
|
| দুধ বা দুধজাত খাদ্য |
১৮৭.৫ | ১৮৭.৫ | ১৮৭.৫ |
| ডিম (সপ্তাহে ৩ দিন ) | |||
| মাছ-মাংস | ৬২.৫ | ৬২.৫ | ৬২.৫ |
| ডাল | ৬২.৫ | ৬২.৫ | ৬২.৫ |
| বাদাম (মাঝে মাঝে ) | ৬২.৫ | ৬২.৫ | ৬২.৫ |
| ফল | ৬২.৫ | ৬২.৫ | ৬২.৫ |
| সবুজ শাক | ১২৫.০ | ১২৫.০ | ১৪০.০ |
| অন্যান্য সবজি | ১৮৭.৫ | ২৫০.০ | ১৮৭.৫ |
| ভাত | ১৮৭.৫ | ২৫০.০ | ১৮৭.৫ |
| রুটি | ১৮৭.৫ | ১৮৭.৫ | ১২৫.০ |
| আলু | ৬২.৫ | ৬২.৫ | ৬২.৫ |
| চিনি/গুড় | ৩১.২৫ | ৪৬.৫ | ৩১.২৫ |
| তেল/চর্বি | ৪৬.৫ | ৬২.৫ | ৪৬.৫ |
|
কাজ-১ : বিভিন্ন প্রকার শারীরিক পরিশ্রমের উপর কী পরিমাণ কিলোক্যালরি শক্তি ব্যয় হয় তার একটি তালিকা তৈরি কর। কাজ-২ : বাড়ন্ত ছেলে-মেয়েদের দৈনিক খাদ্য চাহিদা একটি ছকে উল্লেখ কর। |
Read more